শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :

কক্সবাজার সদর উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন চৌফলদন্ডী এখন ইয়াবা পাচারের এক বিশাল ট্রানজিট পয়েন্ট। নতুন নতুন পথ ও কৌশল নিয়ে পাচার করছে সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নসহ দেশের নানা প্রান্তে। ১৯ জনের নেতৃত্বে শক্তিশালী এ ইয়াবা সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে ঘাতক মরণ নেশা ইয়াবা। মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে চুনোপুটি কয়েকজন পাচারকারী ও ব্যবসায়ীকে আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সিন্ডিকেটের রাঘব বোয়ালরা। অনুসন্ধান ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, খুরুশ্কুল সড়ক এবং চৌফলদন্ডী ব্রীজ হয়ে ইসলামপুর নাপিতখালী পর্যন্ত আঞ্চলিক গ্রামীন সড়কে প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় নিত্য নৈমিত্তিক পাচার হচ্ছে ইয়াবা। অবৈধ ব্যবসায়ীরা এ সড়কটিকে বেঁচে নিয়েছে নিরাপদ সড়ক হিসাবে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর সকালে খুটাখালী কচ্ছপিয়া ঢালায় ১৯৮০ পিস ইয়াবা, চট্টমেট্রো গ ১২-৪৪২৮ সাদা রঙের গাড়িসহ জাহাঙ্গীর ও আবদুল কাদের নামের ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে হাইওয়ে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চৌফলদন্ডী ব্রীজে ভাড়ার জন্য অপেক্ষারত বেশ কয়েকজন সিএনজি চালক গাড়ীটি খুব ভোরে চৌফলদন্ডী মাঝের বাজার থেকে নাপিতখালীর দিকে চলে যেতে দেখেছেন বলে জানান। স্থানীয়দের ধারণা, ইয়াবা ব্যবসায়ী একরাম মেম্বার গ্রুপের কোন এক সদস্য গাড়ীটির ব্যাপারে পুলিশকে তথ্য দিয়েছিল। যেহেতু মাঝের বাজার এলাকাটি আরেক ইয়াবা গডফাদার উছাছিং রাখাইনের পুত্র কিউবা রাখাইন প্রকাশ ইয়াবা রাখাইনের বড় বড় চালান ছাড়াও মোটর সাইকেলের মাধ্যমে হোম ডেলিভারী দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে তাদের। স্থানীয়রা এ ইয়াবা সিন্ডিকেটের অত্যাচার ও কবল থেকে বাঁচতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ ও করেছিলেন কয়েকবার। কিন্তু কেন, কি কারণে তারা গ্রেফতার হয় না তা কারো জানা নেই। চৌফলদন্ডী ই্য়াবা সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ পাড়ার নুরুল হকের পুত্র একরাম মেম্বার। দক্ষিণ রাখাইন পাড়ার উছাছিং রাখাইনের পুত্র কিউবা রাখাইন। মৃত হাজী বদরুদ্দোজার পুত্র মোহাম্মদ হাশেম। হাফেজ নাছির উদ্দীন,

দক্ষিণ পাড়া কালা মিয়ার মেয়ে প্রকাশ মাইয়ুনি, পশ্চিম পাড়ার মোহাম্মদ আলীর পুত্র আবুল হোসেন প্রকাশ আবুশি ও তার স্ত্রী খুরশিদা বেগম, কবির মেম্বারের পুত্র ফজল হক প্রকাশ মিন্টু, লালু, মোঃ একরাম, বজল আহমদের পুত্র আবদুর রহমান, মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র মোঃ সাইফুল, বরকত আলীর পুত্র ছৈয়দ হোসেন, মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র রবিউল, মৃত জসিমের পুত্র মোঃ জকরিয়া আজাদ, মৃত আবদুল কাদেরের পুত্র আবদু শুক্কুর, লশকর আলী, পশ্চিম পাড়া ৪নং ওয়ার্ড রমজান আলী। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের এক অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ১৯জন ছাড়াও রামু উপজেলার পূর্ব ধেচুয়া হেডম্যান পাড়ার নুুরুল আলমের স্ত্রী নুরুচ্ছফা বেগম বেবি সহ ২০ জন ইয়াবা সিন্ডিকেটের তালিকা পি.এন্ড.আর সার্কুলার ১৪-২০১৬ (খন্ড ০১) ৫১৪১(১৩) ১৪ মে ২০১৭, এডিশনাল ডিআইজি, সিআইডি ঢাকাসহ পুলিশ সুপার সিআইডি বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এ তালিকাটি পুনরায় চূড়ান্ত করে ২০/৯/২০১৭ তারিখে ২য় বার পাঠানো হয়। চৌফলদন্ডীর এক সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান একরাম মেম্বার ২০০৬ সালে হত্যা ও অস্ত্র পাচার মামলায় গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক ফোকর এবং টাকার জোরে বেরিয়ে আসে। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, মানব পাচার ও মাদক দ্রব্য আইনে ১৩টি মামলা রয়েছে। স্থানীয়রা আরো জানান, প্রায় ২ ডজনাধিক ব্যক্তি রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। কয়েক বছর আগেও যাদের নুন আনতে পান্থা ফুরায় অবস্থা ছিল। তারা আজ কোটিপতি। ইয়াবা ব্যবসা আর কালো টাকার দাপটে এলাকায় প্রতিনিয়ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে তারা। এ সিন্ডিকেটের কিছু সদস্য বর্তমান শাসক দলের। আবার কিছু বিরোধী দলীয় লোক বলে জানিয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় লোক। বরাবরই সমঝোতার রাজনীতির কৌশল ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছে এ সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়ত ত্রাসের রাজত্ব চালানোর পাশাপাশি এলাকার শান্তিপ্রিয় অসহায় মানুষের জমি দখলেও একটু ক্ষান্ত হয় না। একরাম মেম্বার এবং কিউবা রাখাইনের ১৯ জনের সিন্ডিকেট ইয়াবা মজুদ এবং পাচারের মাধ্যমে পুরো এলাকা নষ্ট করে দিচ্ছে। এদের কবলে পড়ে উঠতি বয়সের তরুণ এবং যুব সমাজ দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চৌফলদন্ডীসহ পাশর্^বর্তী বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন দ্রুত মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে। এলাকাবাসী জরুরী ভিত্তিতে মাদক বিরোধী অভিযানসহ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, উপকূল সড়ক দিয়ে সহজে ইয়াবা পাচারের সুযোগে সিন্ডিকেট সদস্যরা অল্প দিনেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এক মহিলা মেম্বার বলেন, ইয়াবা সিন্ডিকেটের যন্ত্রণায় এলাকার সাধারণ মানুষ শংকার মধ্যে আছেন। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। প্রজন্ম রক্ষায় উপকূলীয় এলাকা চৌফলদন্ডীতে মাদক বিরোধী অভিযান জোরদারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। অপরদিকে তালিকায় উঠে আসা কয়েকজনের নাম ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কে বা কারা প্রশাসনকে দিয়ে হয়রানির উদ্দেশ্যে এলাকায় বিভাজন সৃষ্টি করতে এ কাজটি করেছে। তারা আরো জানান গত কিছুদিন পূর্বে সদর থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার হলিডে মোড় থেকে চৌফলদন্ডী ঘোনা পাড়ার ছদুর পুত্র বেদার ও সিরাজুল হক বহদ্দারের পুত্র আরমান, মধ্যম মাইজ পাড়ার নুর আহমদের পুত্র শাহেদকে জেলা পরিষদ সড়ক থেকে আটক করেছিল। এসময় তারা পুলিশের কাছ থেকে ছাড় পেয়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যানের ভাই সেলিমের পুত্র জুসেফ নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ঐ জুসেফেরও একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. খায়রুজ্জামান জানান, চৌফলদন্ডীর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। যত বড় প্রভাবশালী হউক, ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।